পরিচিতি
শিশুদেরকে বলা হয় একটি জাতির আগামী দিনের নির্মাতা। কেননা একটি দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই দেশের শিশুরাই। সেই অর্থেই শিশুদের বলা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তবে এই শিশুরা তখনই সম্পদে পরিণত হবে যখন তাদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এই সঠিকভাবে গড়ে তুলতে প্রথম ও প্রধানতম উপকরণ তথা মাধ্যম হলো শিক্ষা। তাইতো সর্বদায় আমরা আমাদের শিশুদের জন্য সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং সেখান থেকে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করিয়ে থাকি। কেননা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হলো শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে শেখার অনুকূল পরিবেশ ও একটি ইতিবাচক আন্ত:যোগাযোগ (শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক) তৈরির প্রধান মাধ্যম। এক্ষেত্রে তাই শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করতে একটি অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য যেখানে তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল ফজলের মতে, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির প্রাণশক্তি তৈরির কারখানা আর রাষ্ট্র ও সমাজ দেহের সবচাহিদার সরবরাহ কেন্দ্র। ওখানে ত্রুটি ঘটলে দুর্বল আর পঙ্গু না করে ছাড়বে না।”
শিক্ষা বিজ্ঞান বলছে কঠোর শাসন, নিয়ন্ত্রন, প্রতিকুল পরিবেশ শিশুর শিক্ষা জীবনকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয়। শিশুর মনের আনন্দই তার দেহ মনের শক্তির মূল উৎস। শিশুরা শিখবে বিদ্যালয়, পরিবার ও সমাজ থেকে, একান্ত নিজেদের মতো করে। শিশুরা জানবে সহজভাবে, আনন্দের সাথে। একটু নিয়মানুবর্তীতা অনুসরণই এখানে যথেষ্ট। তাই বলা হচ্ছে জয়ফুল লার্নিং’ই হচ্ছে শিশু শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না।”
শিশুর ওপর জোর করে বিদ্যা চাপিয়ে দেয়ার নাম শিক্ষা নয়। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো প্রকৃত শিক্ষা। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, “ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব পযরষফ’ং ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ভৎড়স রিঃয রহ” -অর্থাৎ “শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত আত্মবিকাশ”। শিশুর সামর্থ ও শক্তিগুলেঅর স্বাভাবিক ও সুষম বিকাশই শিক্ষার লক্ষ্য। শিশুর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলোর আবিষ্কার এবং তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনই শিক্ষকের প্রধান কাজ।
শিক্ষা নিজেই একটি জীবনব্যাপী সামগ্রিক লক্ষ্য প্রক্রিয়া; যে প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের সুযোগ পায়; যে সুযোগ ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগোম করে এবং উৎপাদনশীল অস্তিত্বে পরিণত করে। এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া যা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের একটি অব্যাহত অনুশীলন।
কুষ্টিয়া পাবলিক স্কুল যেহেতু একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রক্রিয়া সেহেতু এর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান যেখানে কাঠামোগত পরিবেশ ঘটিয়ে, একটি স্কুলের পরিবেশে শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাদান; যেখানে শিক্ষার পছন্দক্রম ও প্রয়োজনগুলি উন্মুক্ত রয়েছে এবং অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মানসম্মত আদর্শ ডিজাইন, পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, শারীরিক শিক্ষার সঠিক (যেমন শ্রেণীকক্ষ) নকশা, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টারঅ্যাকশন, মূল্যায়ান পদ্ধতি প্রভৃতি পরস্পর সর্ম্পযুক্ত বিষয়গুলি।
কুষ্টিয়া পাবলিক স্কুল একটি আধুনিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শতকের উৎকর্ষের আলোকে চাহিদা মাফিক আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সর্বব্যাপী মূল্যবোধভিক্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার পূর্ণ কাযকারিতা নিশ্চিতকরণ যেখানে প্রধান লক্ষ্য।
কুষ্টিয়া পাবলিক স্কুলের এই শিক্ষণ প্রক্রিয়া স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শিক্ষার সার্বিক যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পূর্ণরুপে সাযুজ্যপূর্ণ ও অংশগ্রহনমূলক এবং রাষ্ট্র শিক্ষার যে সাধারণ উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে সেই লক্ষ্যের এগিয়ে যাওয়া, লক্ষ্যসমুহ অর্জন করা ও উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখা যথাঃ-
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলির যেমন: ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি বিকাশ ঘটানো।
জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা।
দেশজ আবহ ও উপাদান সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতার উজ্জীবন এবং তার জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করা।
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী ও উৎপাদন সহায়ক করে তোলা; শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা করা।
জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য ও নারী পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা। শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।
গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তনিষ্ঠা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।
মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিসত্মরে মানসম্পন্ন প্রামিত্মক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
বিশ্বপরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিষয়ে উচ্চমানের দক্ষতা সৃষ্টি করা।
জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল) বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং সংশিষ্ট অন্যান্য (গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি) শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ-সচেতনতা এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।
দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।
সব ধরনের প্রতিবন্ধীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।